শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :
অবশেষে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোকে অর্ধশতাধিক আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। গতকাল শনিবার সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দিয়ে দলটি এ ছাড়ের বিষয়টি স্পষ্ট করল।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ রবিবার।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতকে ১৭টি আসনে ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি এলডিপিকে ৫, জমিয়তে ওলামে ইসলামকে ৩, খেলাফত মজলিসকে ২, জাতীয় পার্টিকে (জাফর) ২ এবং বিজেপি, এনপিপি, কল্যাণ পার্টি ও পিপিবিকে ১টি করে আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নতুন গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে গণফোরামকে ৭টি, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে ৫টি করে এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ৩টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দল এই ছাড়ে খুশি হতে পারেনি বলে জানা গেছে। গত রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গে দর-কষাকষি করছিল।
গত শুক্রবার প্রথম দফায় ৩০০ আসনের মধ্যে ২০৬টির চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করেছিল বিএনপি। গতকাল মিত্র দলগুলোর পাশাপাশি বিএনপির বাকি প্রার্থীদেরও চিঠি দেওয়া শুরু হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি হস্তান্তর করা হয় বিএনপির ১০ জনকে। গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় মনোনয়নবঞ্চিত বেশ কয়েকজন নেতার সমর্থকরা।
বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, শামসুজ্জামান দুদু, এহছানুল হক মিলন, তৈমুর আলম খন্দকারসহ অনেকেই মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় দলের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাঁরা মনোনয়ন পেলেন : গণফোরামের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া সাতটি আসনে ছাড় পেয়েছে। ধানের শীষ প্রতীকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬), সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু (ঢাকা-৭), এ এইচ এম খালেকুজ্জামান (ময়মনসিংহ-৮), রেজা কিবরিয়া (হবিগঞ্জ-১), অধ্যাপক আবু সাইয়িদ (পাবনা-১), সুলতান মোহাম্মদ মনসুর (মৌলভীবাজার-২) ও মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন (কুড়িগ্রাম-২)।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু গত রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। আমরা বলেছি, যাঁরা জনপ্রিয় ও যোগ্য তাঁদেরকেই আসন দেওয়া হোক। ’ গণফোরাম কয়টি আসন পেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ১০-১২টি আসন চেয়েছি। এখন কতটি দেবে সেটা বিএনপির ওপর ছেড়ে দিয়েছি। কালকে (রবিবার) ভোরে এসে আমরা চিঠিগুলো নিয়ে যাব। ’ তবে দলটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সাতটি আসনে চূড়ান্ত মনোনয়নের কথা কালের খবরকে নিশ্চিত করেন। তিনি এও বলেন, আরো আসনে ছাড়ের জন্য তাঁরা চেষ্টা করছেন।
বিএনপির মিত্রদের অর্ধশত আসনে ছাড়-২ : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) পেয়েছে পাঁচটি আসন। মনোনীত প্রার্থীরা হলেন দলের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন (কুমিল্লা-৪), সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন (ঢাকা-১৮), ড. সাইদুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-৩) এবং নুরুল ইসলাম মাল (শরীয়তপুর-১)। তাঁরা ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন বলে কালের খবরকে নিশ্চিত করেন আবদুল মালেক রতন।
নাগরিক ঐক্যে পাঁচ প্রার্থী হলেন দলটির আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২), এস এম আকরাম (নারায়ণগঞ্জ-৫), শাহ রহমাতুল্লাহ (রংপুর-১), মোফাখারুল ইসলাম (রংপুর-৬) ও জে এম নুরুল রহমান জাহাঙ্গীর (বরিশাল-৪)। তাঁরাও ধানের শীষ নিয়ে লড়বেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার কুড়ি সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হবেন। অন্য আসনটি টাঙ্গাইল-৪। এ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে দুজন প্রার্থী আছেন। একজন কাদের সিদ্দিকীর ভাই আজাদ সিদ্দিকী অন্যজন ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী। এঁদের মধ্যে যেকোনো একজন ধানের শীষ প্রতীক পাবেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে আজ। তবে গাজীপুর-৩ আসনে ইকবাল সিদ্দিকীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা : ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিজেপি একটি, খেলাফত মজলিস ২টি, এলডিপি ৫টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৩টি, এনপিপি ১টি এবং পিপিবিকে ১টি আসন ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। তবে জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, আসন ভাগাভাগির আলোচনা চলছে, শেষ না হলে বলাটা ঠিক হবে না।
এলডিপির প্রার্থীরা হলেন অলি আহমদ (চট্টগ্রাম-১৪), রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), মাহবুব মোর্শেদ (ময়মনসিংহ-১০), মো. নুরুল আলম (চট্টগ্রাম-৭)। শাহদাত হোসেন সেলিম গতকাল রাতে সাংবাদিকদের জানান, চাঁদপুর-৫ ও ময়মনসিংহ-১ আসন নিয়ে দেনদরবার হচ্ছে।
জোটের অন্য প্রার্থীরা হলেন বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ (ঢাকা-১৭), এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২), পিপিবির রিটা রহমান (রংপুর-৩), কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (চট্টগ্রাম-৫), খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের (হবিগঞ্জ-৪) ও মুফতি মুনির হোসেন (নারায়ণগঞ্জ-৪), জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর শাহিনুর পাশা (সুনামগঞ্জ-৩), আবদুল বাসিদ আজাদ (হবিগঞ্জ-২), মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস (যশোর-৫), জাতীয় পার্টির (কাজী
জাফর) টি আই ফজলে রাব্বী (গাইবান্ধা-৩), আহসান হাবিব লিংকন (কুষ্টিয়া-২)।
এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আসনের বিষয়ে এখনো বিএনপির পক্ষ থেকে কিছুই বলা হচ্ছে না। তবে জামায়াতের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ২৪টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। শুধু এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ নিজ দলের ‘ছাতা’ প্রতীকে লড়বেন।
বিএনপির যাঁরা মনোনয়ন পেলেন : গতকাল বিএনপি ঘোষিত ১০ জনের মনোনয়ন তালিকায় রয়েছেন কাজী মনির (নারায়ণগঞ্জ-১), শহীদুল আলম তালুকদার (পটুয়াখালী-২), আব্দুর রশিদ সরকার (গাইবান্ধা-২) (জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া), আলী আসগর (ময়মনসিংহ-১), আবু তাহের তালুকদার (নেত্রকোনা-৫), রশিদুজ্জামান মিল্লাত (জামালপুর-১), হাজি আমিন উর রশীদ ইয়াসিন (কুমিল্লা-৬), খন্দকার আবদুল মুক্তাদির (সিলেট-১), শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (চাঁদপুর-৩), খন্দকার মাহবুব হোসেন (বরগুনা-২)।
এ ছাড়া নাদিম মোস্তফা আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় রাজশাহী-৫ আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন হচ্ছে। সেখানে নজরুল ইসলাম মণ্ডলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে বাদ দিয়ে নাদিম মোস্তফাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।